ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন
কক্সবাজারের নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জন্নাতকে পদত্যাগ না করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫ টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জন্নাত বলেন, আমি ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করি। ২০০৭ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হই। ২০১৬ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।
আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্কুলের একাডেমিক সাইডের ক্রমান্বয়ে উন্নয়ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের মান বৃদ্ধিসহ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে উপজেলা/জেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গৌরব অর্জন করেছে।
এ ছাড়া ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষ সম্প্রসারণ/নির্মাণ/আধুনিকায়ন, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সুপরিসর অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরী, ফুলের বাগান, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের সীমানাকে সুরক্ষিত করেছি, মার্কেট সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ওয়াশ ব্লক ও সুপেয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়াও, ভূমি খেকোদের নিকট থেকে স্কুলের মূল্যবান ভূমি উদ্ধার করেছি। এই প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতে আমরা সকলেই নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের জন্য এসব করার পরেও একটি চক্র বারংবার গভীর চক্রান্ত করেই চলছে।
খুরশিদুল জন্নাত বলেন, আমি একজন নারী হিসেবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও শিক্ষা বিস্তারে নিজের মেধা—মননশীল কাজের মধ্য দিয়ে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ একটা বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে যথাক্রমে জেলা ও উপজেলায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছি। এই স্কুলের ছাত্ররা দেশের সেবায় নিয়োজিত। বহু ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন পেশায় আত্মনিয়োগ করে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।
মূল বিষয়টি হলো, আব্দুর রহিম নামের একজন অভিভাবক বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন বিষয়ে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা করেন।
ওই মামলার বিবাদীগণের মধ্য থেকে চারজন অভিভাবক ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগপত্র তৈরি করেন। যেখানে এক কোটি ৭৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ ৩৬ টি অভিযোগ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রচার করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহি অফিসার ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে সরেজমিনে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। একই অভিযোগ মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে এই বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা প্রথমে ২৮ টি দাবি দেয়। তাদের সব দাবী মেনে নেয়ার পর তারা চলে যান। দু’দিন পর আবারো একই ইস্যু নিয়ে হাজির। কিন্তু এবার প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবী করে তারা। আমার প্রশ্ন হচ্ছে— যদি কোন অনিয়ম হলে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জানান তারা তদন্ত করুক। কিন্তু বার বার একই বিষয় নিয়ে একটি গোষ্ঠী ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। পদত্যাগ না করলে বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জন্নাত।
তিনি আফসোসের সঙ্গে প্রশ্ন তুলে বলেন, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে আত্মনিয়োগ করায় কি তাহলে আমার অপরাধ? না হয় তাদের উদ্দেশ্য কী? নাকি আমি একজন নারী হিসেবে প্রধান শিক্ষক পদে আছি এটাই তাদের কাছে আমার অপরাধ?
সংবাদ সম্মেলনে স্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল হক, শিক্ষক শ্রীমতি পূর্ণাম পাল, শাহ জালাল মুনির, মো. রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলম, অভিভাবক আবছার কামালসহ ছাত্র—ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও চান স্কুল আঙ্গিনা থেকে এমন ভীতিকর পরিস্থিতি নিপাত যাক।