আগামীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে জামায়াতে ইসলামি দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলে দাবি করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে কাউকে বেকার থাকতে দেব না। প্রতিটি মানুষের জন্য কর্মস্থান সৃষ্টি করা হবে। প্রতিটি যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঝিনাইদহ শহরের ওয়াজির আলী হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারকে জালিম আখ্যা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত জালিম সরকারের সময় যারা সিন্ডিকেট করেছিলো তারা জাতির ঘাড়ে এখনও বসে আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। তাই এ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সিন্ডিকেট না ভাঙলে দেশের মানুষ আরও নির্যাতিত হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে বৈষম্যহীন শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
বিগত সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের সকলকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী দিনে জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে নারীদের সবোর্চ্চ সম্মানের সাথে সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোনো নাগরিক তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। যেখানে সবাই মিলেমিশে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হিংসামুক্ত সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, যারা একদিন গর্ব করে বলতেন এ দেশে জালিম কাউকে থাকতে দেওয়া হবে না। দেশ থেকে জালিমদের বিতাড়িত করতে হবে। অথচ আজ তারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বিদেশে বন্ধু থাকবে কিন্তু কোনো প্রভুত্ববাদ মেনে নেওয়া হবে না। কেউ যদি প্রভুত্ব করতে আসে তাহলে জাতি তাদের উচিত জবাব দেবে।
‘এমন একটি সমাজ গড়া হবে যেখানে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো বিচারপ্রার্থীকে হয়রানির শিকার হতে হবে না। বিচারক দুর্নীতিমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রের আইন ও বিবেক দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবে’—যোগ করেন শফিকুর রহমান।
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশের মানুষ স্বৈরাচার সরকার দ্বারা নির্যাতিত। তবে দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে নির্যাতিত ও মজলুমের দল। এই দলের নেতাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিচারের নামে জুলুম করে গুম, খুন করা হয়েছে। বিগত সরকার জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে নানা পাঁয়তারা করেছে।
‘তারা গণআন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে অন্যায়ভাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রতীক কেড়ে নেয়। তবে জামায়াতে ইসলামী প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তবে দেশপ্রেমী এবং আলেম-ওলামাদের যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে।’
অন্তরর্বতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বৈরাচার সরকারের কোনো দোসর যেন রাষ্ট্রের কোনো স্তরে না থাকে। তারা থাকলে এই দেশ ও সরকারকে ব্যর্থ করে দিবে। জনগণের বিপ্লবকে ব্যর্থ করে ছাত্র-জনতার স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাবে।
কর্মী সম্মেলনে ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতে ইসলামের আমির আলী আজম মো. আবু বকর এর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক প্রচার ও মিডিয়া বিভাগ মো. আবদুল হাই’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মো. মোবারক হুসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় ইউনিট সদস্য ড. মাওলানা মোজামম্মেল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হাই, আব্দুল আলীম, আবু তালিব, ড. হাবিবুর রহমান, ইবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মনিরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।